নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর

 

নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর

নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান। এটি মানুষের ভালোমন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করে। আর ধর্ম হচ্ছে এমন এক অতিপ্রাকৃত সত্তার বিশ্বাস, যা বিশ্বাসকারীকে এমন আবেগজনিতভাবে প্রভাবিত করে যা তাকে অতিপ্রাকৃত সত্তার দিকে চালিত কতকগুলো ক্রিয়া সম্পাদন করতে বাধ্য করে। ধর্ম বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, ধারক ও নৈতিক কর্তা হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করে। ধর্ম ঈশ্বরকে নৈতিক কর্তা হিসেবে বিবেচনা করে। তাই নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক

নিম্নে নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।

প্রথমত, ধর্মবিশ্বাস আমাদেরকে বিশেষভাবে আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আর নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের এ আচরণকে মূল্যায়ন করাই নীতিবিদ্যার কাজ। তাই নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

দ্বিতীয়ত, নৈতিকতা আমাদের মনে এক ধরনের বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে, যার ফলে আমরা মন্দ কাজ করার পর ভালো কাজ করতে প্রবৃত্ত হই। আর এ ধরনের অনুভূতি প্রত্যেক ধর্মেই রয়েছে। তাই উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে

তৃতীয়ত, নৈতিকতা নৈর্ব্যক্তিক নিয়মের আনুগত্যের পরিবর্তে ব্যক্তিগত আনুগত্যকে ব্যঞ্জনীয় প্রকাশ করে। ব্যক্তিগত ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্যতাবোধের কথা উল্লেখ করে ধর্ম নৈতিক বাধ্যতাবোধের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে। তাই উভয়ের সম্পর্ক নিবিড়।

চতুর্থত, নৈতিকতা এমন এক তাড়না বা প্রবাহকে ব্যঞ্জনায় প্রকাশ করে, যা অতিপ্রাকৃত। এ মত তাদের দ্বারাই সমর্থিত হয়ে থাকে যারা মনে করেন যে, আমাদের মধ্যকার বিবেকের বাণীই আল্লাহর বাণী। এদিক থেকে উভয়ই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

পঞ্চমত, নীতিবিদ্যা ও ধর্ম উভয়ই নীতিকথা নিয়ে আলোচনা করে। নীতিবিদ্যা ও ধর্ম যদিও স্বতন্ত্র বিদ্যা তথাপি অনেক ক্ষেত্রে নৈতিক নিয়মের সাথে ধর্মের যথেষ্ট মিল। তাই এদিক থেকে উভয়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ।

ষষ্ঠত, নৈতিকতার সর্বোত্তম ক্ষেত্র হলো অপ্রাকৃতিক দিক। নৈতিক সূত্রের অনুসন্ধানকারীরা অনেক সময় তাদের ক্রিয়াবলির এ পার্থিব জগতে ফলাফলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে একটি আধ্যত্মিক জ্ঞানের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে, যাকে মূলত নৈতিক বলে বিশ্বাস করা হয়।

সপ্তমত, নীতিবিদ্যা ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। উভয়ই এক সাথে চলে। যে লোক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে তার মধ্যে নৈতিকতাবোধ থাকবেই। সুতরাং নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

অষ্টমত, নৈতিকতা ব্যতীত যেমন ধর্ম সম্ভব নয় তেমনি ধর্ম ব্যতীত নৈতিকতা সম্ভব নয়। কেননা মানুষ যদি ধার্মিক হয় তাহলে তার মধ্যে নৈতিকতা থাকবেই। নৈতিকতা না থাকলে মানুষ কখনো ধর্মীয় কাজকর্ম ঠিকমত পালন করতে পারে না। তাই নৈতিকতা ও ধর্ম পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। উভয়ই একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই নীতিবিদ্যা ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। কান্ট (Kant) বলেছেন, নীতি থেকেই ধর্মের উদ্ভব। আর ডেকার্ট, লক (Locke) বলেছেন, ধর্ম থেকেই নীতির উদ্ভব। সুতরাং বলা যায়, নীতিবিদ্যা ও ধর্ম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ