সমাজকর্মের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক আলোচনা কর

 

সমাজকর্মের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক আলোচনা কর

সমাজকর্ম একটি সমন্বয়ধর্মী সমাজবিজ্ঞান। সমাজ জীবনের সার্বিক দিকের উন্নতিই সমাজকর্মের লক্ষ্য। তাই মানবজীবনের সামগ্রিক দিক অর্থাৎ, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, দৈহিক, মানসিক ইত্যাদি দিকের উন্নতি করতে হলে সমাজকর্মীকে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান হতে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। তবে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান হতে জ্ঞান আহরণ করলেও সমাজকর্ম নিজেকে একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সমাজকর্মের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

সমাজকর্ম ও অর্থনীতি উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞান। এদের বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও নীতিমালার প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল।

১. পরিধিগত

সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের সার্বিক কল্যাণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্ম পরিচালনা করে থাকে। সমাজকর্ম ও অর্থনীতি দু'টিই সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। এ বিবেচনায় সমাজকর্ম ও অর্থনীতি সম্পর্কযুক্ত।

২. লক্ষ্যগত

মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের প্রচেষ্টাই অর্থনৈতিক কার্যাবলি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য মানুষ সম্পদ আহরণে সর্বদাই নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে চলছে। আর সমাজকর্ম মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত। অর্থনৈতিক উন্নতি সার্বিক কল্যাণের অন্যতম চাবিকাঠি। তাই সমাজকর্ম সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য সর্বদাই সচেষ্ট। এদিক থেকে সমাজকর্ম ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

৩. নীতিগত

অর্থনীতি সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে। আর সমাজকর্ম সামাজিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সামাজিক ক্রিয়াকলাপেরই অংশবিশেষ। এ বিবেচনায় সমাজকর্ম ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

৪. সামঞ্জস্যগত

সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের অসীম অভাব পূরণে সহায়তা করা যেমন অর্থনীতির মূল লক্ষ্য, তেমনি সমাজকর্মও মানুষের আয়ত্তাধীন সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। অর্থাৎ, লক্ষ্যগত দিকে সমাজকর্ম ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

৫. উদ্দেশ্যগত

সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির সাথে মানুষের সামঞ্জস্য বিধান করতে হয়। এমন ক্ষেত্রে অর্থনীতি যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে, তেমনি সমাজকর্মও পরিবর্তিত আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে মানুষকে সহায়তা করে। এদিক থেকে সমাজকর্ম ও অর্থনীতি সম্পর্কযুক্ত।

৬. ধারণাগত

সমাজের সার্বিক কল্যাণে সমাজকর্মের ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন পড়ে। অর্থ ছাড়া কোন কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তেমনি কোন কর্মসূচিতে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা নিরূপণ করতে হলে সমাজকর্মীকে অর্থনীতির জ্ঞান আহরণ করতে হয়। এ বিবেচনায় সমাজকর্ম ও অর্থনীতি সম্পর্কযুক্ত।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সমাজকর্ম ও অর্থনীতির মধ্যে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি সম্পর্ক ও রয়েছে। তাই সমাজকর্মের ভিত্তি হল অর্থনীতি। Friedlander বলেছেন, "সমাজকর্ম এর জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, চিকিৎসাবিদ্যা, মনোচিকিৎসা নৃতত্ত্ব, জীববিদ্যা, ইতিহাস শিক্ষা ও দর্শনশাস্ত্র হতে লাভ করে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একটি নিজস্ব বিজ্ঞান গড়ে তুলেছে।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ