দর্শন কি | দর্শন কাকে বলে | দর্শন শব্দের উৎপত্তি


দর্শন কি | দর্শন কাকে বলে | দর্শন শব্দের উৎপত্তি

দর্শন কি

দর্শন (Philosophy) জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যাবলির সামগ্রিক ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করে থাকে। দর্শন যুগ ও কালের সৃষ্টি। যুগ ও কালের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় দর্শন চিন্তার মধ্য দিয়ে। দর্শন কোনো বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক অনুসন্ধানের বিষয় নয়, কোনো বিমূর্ত চিন্তাভাবনাও নয়। এটি সমাজজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়, বরং সমাজজীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। মূর্ত মানুষ, মূর্ত জীবন প্রক্রিয়া -এর ভিত্তি। এই অর্থে দর্শন প্রায়োগিক। দর্শন কেবল সমাজজীবনের ব্যাখ্যাই করে না, এর পরিবর্তনের দিকনির্দেশনাও দেয়। দর্শন কোনো একটি নির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষ জ্ঞান প্রদান করে না, এটি অখণ্ড দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎ ও জীবনের সামগ্রিক ব্যাখ্যা প্রদান করে।

গ্রিক দার্শনিক থেলিস (Thales) |৬২৪-৪৪৬] থেকে দর্শনের শুরু হয়েছিল। তবে ফিলোসফি (Philosophy) কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব দু'শতকের গ্রিক চিন্তাবিদ পিথাগোরাস। থেলিস বলেন, জগতের সমুদয় বস্তু পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। অনত্মকাল থেকেই মানুষের জগৎ ও জীবনকে জানার আগ্রহ রয়েছে। অস্বাভাবিক সমস্যার সম্মুখীন হলেই মানুষ চিন্তা বা বিচারবিশ্লেষণের মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা চালায়। এ ধরনের প্রচেষ্টাই দার্শনিক প্রয়াস নামে পরিচিত।

দর্শন শব্দের উৎপত্তি

দর্শনের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Philosophy'। 'Philosophy' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Philos' এবং 'Sophia' থেকে উদ্ভূত হয়েছে। 'Philos' শব্দের অর্থ 'Loving' বাংলায় অনুরাগ এবং 'Sophia' শব্দের অর্থ 'Knowledge’ বাংলায় 'জ্ঞান'। সুতরাং 'Philosophy' -এর ধাতুগত অর্থ হলো জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ (Love of wisdom) দর্শন মূলত সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃত ভাষায় 'দর্শন' কথাটির সাধারণ অর্থ হলো দেখা। দৃশ ধাতু থেকেই দর্শন শব্দের উৎপত্তি। দর্শন বলতে সাধারণত চাক্ষুষ প্রত্যক্ষণকে বুঝায়, তবে এক্ষেত্রে 'দর্শন' মানে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষণ নয়। 'দর্শন' মানে তত্ত্ব দর্শন, জগতের এবং জীবের স্বরূপ উপলব্ধিসত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি বা তত্ত্ব সাক্ষাৎকারই দর্শন

দর্শন কাকে বলে

দর্শনের সংজ্ঞা দেয়া খুবই জটিল ব্যাপার। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশে দার্শনিকগণ এর বিষয়বস্তু ও অন্যান্য দিকের উপর জোর দিয়ে দর্শনের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেন। যেমন- গ্রিক দার্শনিক প্লেটো (Plato) এর মতে, “চিরন্তন এবং বস্তুর মূল প্রকৃতির জ্ঞান অর্জন করাই দর্শনের লক্ষ্য।”

দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) এর মতে, “সত্তা স্বরূপত যা এবং এর স্বরূপের অঙ্গীভূত যেসব বৈশিষ্ট্য তার অনুসন্ধান করে যে বিজ্ঞান তাই দর্শন।"

দার্শনিক তিতাস (Titus) বলেন, “দর্শন হচ্ছে ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং শব্দ ও ধারণার অর্থ স্পষ্টকরণ।”

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলো একত্রিত করে বলা যায় যে, যে শাস্ত্র সত্তার বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান করে এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণ দ্বারা জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে, তাকে দর্শন বলে।

পরিশেষে বলা যায়, দর্শন অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞান বা সত্যের অনুসন্ধানে ভাবাবেগের পরিবর্তে উদার দৃষ্টিভঙ্গি, অনুধ্যান, বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ ও জীবনের সাথে জড়িত চিরন্তন সমস্যাবলির সুষ্ঠু ও যুক্তিসম্মত গূঢ় আলোচনার প্রচেষ্টা চালায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ