ই-গভর্নেন্স বলতে কী বোঝ এবং বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্স এর প্রয়োজনীয়তা

ই-গভর্নেন্স বলতে কী বোঝ এবং বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্স এর প্রয়োজনীয়তা

ই-গভর্নেন্স বলতে কী বোঝায়

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন তথ্য ও সেবা জনগণের নিকট পৌছানোকে ই-গভর্নেন্স বলে। ই-গভর্নেন্সের (e-governance) মূল উদ্দেশ্য হলো তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনয়ন করা। এছাড়া তথ্যভিত্তিক সমাজ গঠন করে জনগণকে সরকারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা, নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় শাসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা, জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত তথ্য-প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেওয়া, সরকারি কার্যক্রমের ব্যয় কমিয়ে অল্প সময়ে সেবা প্রদান করা, অবাধ তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে জনগণকে রাজনীতিতে সচেতন করে তোলা ইত্যাদি ই-গভর্নেন্সের উদ্দেশ্য । ই-গভর্নেন্স দুটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,

  • ই-গভর্নেন্স প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে থাকে
  • এটি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে

বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্স এর প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা

ই-গভর্নেন্স চালু হলে নানাবিধ প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা পাওয়া যাবে । আধুনিক কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণের জীবযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া উন্নয়নের জন্য সরকার ও জনগনের মধ্যে যোগাযোগকে সহজতর করা প্রয়োজন। ই-গভর্নেন্স এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ই-গভর্নেন্স এর ফলে সরকারের সাথে নাগরিকের (G2C), নাগরিকের সাথে সরকারের (C2G) এবং সরকারের সাথে ব্যবসায়ীদের (G2B) তথ্যের প্রবাহ ও সম্পর্ক স্থাপন সহজ হবে। আবার জনগণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ, পরিবহন, ডাক, চিকিৎসা, শিক্ষা, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি সরকারি সেবা সহজেই পাবে । তাছাড়া ই-টেন্ডার, ই-লাইসেন্স প্রক্রিয়ার কারণে সরকারি কাজের ঠিকাদারি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। ফলে জনগণের সার্বিক জীবনমান উন্নত হবে। এসব কারণে সরকার ও নাগরিকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। এটি সুশাসনের জন্য সহায়ক। এছাড়া ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়িত হলে সরকারের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে, দুর্নীতি কমবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে, সময় বাঁচবে, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহন বাড়বে, মানবসম্পদের উন্নয়ন হবে এবং সর্বোপরি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

ই-গভর্নেন্স হলো শাসনকার্যে স্বচ্ছতা ও দ্রুতগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রমে ডিজিটাল যন্ত্র-সরঞ্জাম তথা প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানো। এর আওতায় সরকারের সাথে নাগরিকদের যোগাযোগ ও তথ্যের আদান-প্রদান, সহজে ও দ্রুত নাগরিকদের সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের সাথে অন্য রাষ্ট্রের যোগাযোগ ইত্যাদি কাজ চালানো হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে জনগণ ঘরে বসেই বিভিন্ন সরকারি সেবা ভোগ করছে। ই-গভর্নেন্স তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি খাতে সরকার যে সেবা দিচ্ছে তা জনগণের কাছে পৌঁছানো সহজতর হচ্ছে।

ই-গভর্নেস দুর্নীতি রোধ করে

 প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ই-গভর্নেস দুর্নীতি রোধ করে। ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রম অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ায় দুর্নীতির সুযোগ থাকে না। ই-গভর্নেন্স প্রক্রিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক সেবাসমূহ প্রদান করায় দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ই-গভর্নেন্সের ফলে প্রশাসনিক তথ্যগুলো অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে। ফলে জনগণ খুব সহজেই প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কী কাজ হচ্ছে তা জানতে পারে। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ লোকচক্ষুর অন্তরালে কিছুই করতে পারে না। ফলে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায় । এতে করে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ