নীতিবিদ্যার পরিধি আলোচনা কর | নীতিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় কি

 

নীতিবিদ্যার পরিধি আলোচনা কর

নীতিবিদ্যা মানবজীবনের পরম কল্যাণ লাভে সহায়ক নৈতিক নিয়মগুলো নির্ধারণ করে। যে নৈতিক নিয়মগুলো পালন করলে মানুষ তার জীবনের পরম কল্যাণকে লাভ করতে পারে সে নিয়মগুলো নির্ধারণ করার চেষ্টা করে নীতিবিদ্যা। নৈতিক ধারণার ব্যাখ্যা ও ভাষাগত বিশ্লেষণসহ নৈতিক পদের সাথে নৈতিক বচন বা সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিরূপণ করাই এর কাজ।

নীতিবিদ্যার পরিধি ও বিষয়বস্তু

নিম্নে নীতিবিদ্যার পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো। নিচের ১০ টি বিষয়বস্তু-ই নীতিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়

১. নৈতিক মূল্য ও আদর্শ

মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য ও আদর্শ নির্ধারণ করা নীতিবিদ্যার কাজ। নীতিবিদ্যায় মানুষের আচরণ বলতে মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে বুঝানো হয়। নীতিবিদ্যা শুধু মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া বিচার করে। ঐচ্ছিক ক্রিয়ার স্বরূপ, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার সাথে অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার পার্থক্য, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার ধাপ, ঐচ্ছিক ক্রিয়ার উৎস, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় প্রভৃতি নীতিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত।

২. নৈতিক নিয়ন্ত্রণ

নৈতিক নিয়ন্ত্রণ কী? নৈতিক নিয়ন্ত্রণের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়?-এসব বিষয় নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয় । নৈতিক ক্রিয়া, অনৈতিক ক্রিয়া, ইচ্ছা, অভিক্ষা, আচরণ, চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয়।

৩. নৈতিক বাধ্যতাবোধ

ঔচিত্য ও অনৌচিত্যবোধের সাথে নৈতিক বাধ্যতাবোধ বিশেষভাবে জড়িত। কান্ট (Kant) বলেন, “যে ঔচিত্যবোধের সাথে বাধ্যতাবোধ জড়িত নয়, সেই ঔচিত্যবোধের কোনো অর্থ নেই।” নৈতিক বাধ্যতাবোধের স্বরূপ কী? উৎস কোথায়?-এসব প্রশ্ন নীতিবিদ্যায় আলোচনা করা হয়।

৪. নৈতিক বিচার

নীতিবিদ্যা নৈতিক বিচারের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। নৈতিক বিচারের কর্তা কে? নৈতিক বিচারের যথার্থ বিষয়বস্তু কী? নৈতিক বিচারের স্বরূপ কী? এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে নীতিবিদ্যা।

৫. নৈতিক বিচারের মানদণ্ড

নৈতিক বিচারের মানদণ্ড নির্ধারণ করা নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ। নৈতিক বিচারের সময় এ মানদণ্ডকে সামনে রাখতে হয়। এ মানদণ্ড অনুযায়ী যে কাজ করা হয় তাকে ভালো কাজ বলা হয়। আর এ মানদন্ড অনুযায়ী যে কাজ করা না হয় তাকে মন্দ কাজ বলা হয়।

৬. অধিকার ও কর্তব্য এবং সততা ও অসদাচার

নৈতিক অধিকার ও কর্তব্য এবং সততা ও অসদাচার নীতিবিদ্যার আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। নৈতিক আদর্শ অনুযায়ী যে কাজ আমাদের করা উচিত তা হলো কর্তব্য। অধিকার ও কর্তব্য অনেক সময় একত্রে চলে।

৭. নৈতিক অবধারণের স্বীকার্য সত্য

প্রতিটি বিজ্ঞানেরই কতকগুলো স্বীকার্য সত্য রয়েছে। নীতিবিদ্যারও কতকগুলো স্বীকার্য সত্য রয়েছে। ইচ্ছার স্বাধীনতা, আত্মার অমরত্ব, ঈশ্বরের অস্তিত্ব হচ্ছে নৈতিক অবধারণের স্বীকার্য।

৮. নৈতিক আদর্শ ও প্রগতি

নীতিবিদ্যার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির মধ্যে একটি নৈতিক ভাব গড়ে তোলা। তাই নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শ ও প্রগতি সম্পৰ্কীয় বিষয় নিয়েও আলোচনা করে।

৯. নৈতিক মানদণ্ড ও মতবাদ

নৈতিক আদর্শ বা মানদণ্ড অনুসারে মানুষের ক্রিয়াকলাপের ভালোত্ব বা মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব বা অন্যায়ত্ব ইত্যাদি নিরূপণ করা হয়।

১০. শান্তির নৈতিক ভিত্তি

কোনো ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রের বিপক্ষে নীতিবিরুদ্ধ কাজ করলে সে অপরাধী হয় এবং এ অপরাধের জন্য তার শাস্তি পাওয়া উচিত। শাস্তির নৈতিক ভিত্তি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন মতবাদগুলো নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।

পরিশেষে বলা যায় যে, নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের বা ঐচ্ছিক ক্রিয়ার নৈতিক মূল্য বিচার করে। এটি মানুষের জীবনের পরমকল্যাণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান আর পরম কল্যাণের ব্যাখ্যা দেওয়াই নীতিবিদ্যার অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ