সমাজ কি, কাকে বলে, কত প্রকার এবং সমাজের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

 

সমাজ কি, কাকে বলে, কত প্রকার এবং সমাজের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

সমাজ কাকে বলে

যে প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মানুষ সংঘবদ্ধ বসবাস করে এক বা অধিক গোত্র বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, সেই ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়াকে সমাজ বলেসমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা হচ্ছে সমাজ।

মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে, সমাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল, নিরাপত্তা জীবন ধারণের সহজিকরণ করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ সংঘবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে যার ফলে সমাজের সূচনা ঘটে। মানব সমাজের আদিম রুপে মানুষ বন্য প্রাণী শিকার বন্য ফলমুল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো এবং কালের পরিক্রমায় সেই সমাজ বিবর্তিত হতে আজকের এই Post modern বা উত্তর আধুনিক সমাজের রুপ পরিগ্রহ করেছে।

সমাজের উপাদান কি কি বা সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি

জন সমষ্টি : জন সমাগম বা মানুষের সমাবেশ হচ্ছে সমাজের মূল ও প্রধান উপাদান। একটি সমাজকে পরিপূর্ণতা দান করে সমাজের মানুষের জন সমষ্টি। জন সমষ্টি দ্বারাই মানব সম্প্রদায় গড়ে উঠে।

সংস্কৃতি : একটি সমাজের রীতি-নীতি বা নিয়ম-কানুন প্রত্যেক সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। সংস্কৃতি সমাজের ধারা বংশানুক্রমিকভাবে বজায় রাখে। সম্প্রদায় বা গোত্র ঠিকে থাকে সংস্কৃতির মাধ্যমে।

পণ্যের আদান-প্রদান সমাজে বসবাসের ক্ষেত্রে মানুষের ভোগ বিলাস বা নিত্য দিনের প্রয়োজন মেটাতে অনেক ধরণের পণ্যের দরকার হয়। মানুষ একে অপরের সাথে পণ্যের আদান এবং প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে পারে সহজেই। সমাজে পণ্যের আদান প্রদান হবে, এটি সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

প্রতিষ্ঠান সমূহ : মসজিদ, মন্দির, সবধরণের উপাসানালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা সমাজের মানুষদের মস্তিষ্কের উন্নয়ন সাধন এবং মনের আত্ন-তৃপ্তি প্রদান করে থাকে। 

সমাজ কত প্রকার ও কি কি

সমাজবিজ্ঞানীগণ মানব সমাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন, যেমন:

. Hunting and gathering society বা শিকার ও সমাবেশকেন্দ্রিক সমাজ: এটি হচ্ছে মানব সমাজের আদি রুপ, এই সমাজের মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপকরণ ছিলো বন্য প্রাণী শিকার বন্য ফলমুল সংগ্রহ করা। এই সমাজে প্রযুক্তির বিকাশ তেমন হয়নি, এই সমাজের মানুষ হাত অথবা গাছ পালার ডালকে শিকারের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো এই সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছু ছিলো না যার ফলে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসও ছিল না, সে কারণে সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স এই সমাজকে বলেছেন Primitive communism বা আদি সাম্যবাদী সমাজ

. Horticultural society বা উদ্যান কেন্দ্রিক সমাজ: এই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ প্রযূক্তিগত দিক থেকে Hunting and gathering society থেকে এগিয়ে যায়, এবং খাদ্য সংগ্রহের পরিবর্তে উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কৃষি ভিত্তিক সমাজের ধারণাই শুরু হয় Horticultural society থেকে। এখানে মানুষ বীজ থেকে নয় গাছের ডালপালা থেকে নতুন গাছ উৎপাদন করতো। 

. Harding society বা পশু প্রতিপালন কেন্দ্রিক সমাজ: এই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পশু স্বীকারের এক পর্যায়ে মানুষ লক্ষ্য করলো, পশু স্বীকার বেশ কষ্টসাধ্য আবার সব সময় স্বীকার পাওয়াও যায় না। এই সমস্যার সমাধান কল্পে মানুষ জ্যান্ত পশু স্বীকার শুরু করলো, এবং এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলো এই পশুগুলো পোষ মানছে। আর এভাবেই মানুষ পশু শিকার থেকে পশু পালনের দিকে ধাবিত হয়। 

. Agrarian society বা কৃষিভিত্তিক সমাজ: কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চালু হয় লাঙ্গল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। লাঙ্গল আবিষ্কারের পর কৃষির বিকাশ লাভ করতে থাকে, এবং এর ফলে প্রথম বারের মত মানুষ স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলে, ইতিপূর্বে মানুষ nomadic বা যাযাবর জীবন যাপন করতো। কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরানোর অবসান ঘটে এবং মানুষ fixed settlement বা স্থায়ী আবাসনের দিকে ধাবিত হয়।

. Industrial society বা শিল্পনির্ভর সমাজ: বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে মানব সভ্যতা প্রযূক্তিগত ভাবে অনেক বেশি অগ্রসরমান হয়ে যায়। প্রযূক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবেই ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে(ইংল্যান্ডে) শিল্প বিপ্লবের সূচনা ঘটে।

শিল্প বিপ্লবের ফলে গোটা ইউরোপ জুড়ে ধীরে ধীরে ফিউডালিজম বা সামন্তবাদের সমাপ্তি ঘটে এবং কৃষি ভিত্তিক সমাজ কাঠামোর পরিবর্তে শিল্পোন্নত সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিল্পোন্নত সমাজ বা Industrial society তে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রতা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি মতবাদ জনপ্রিয়তা লাভ করে যার ফলে সমাজে ধর্মের প্রভাব খর্ব হয়, পূর্বের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সকল রীতিনীতি ভেঙে পরে এবং নতুন সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত হয়।

শিল্পোন্নত সমাজে প্রযুক্তি চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছে যায়, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি সহ জনসংখ্যার ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের জীবনধারা পূর্বের চেয়ে উন্নত এবং জটিল আকার ধারণ করে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ