মদিনা সনদ কী | পটভূমি ও আলোচনা

 

মদিনা সনদ কী

মদিনা সনদ কী

৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) কর্তৃক ঘোষিত মদিনা সনদের Concept বা ধারণায় উজ্জীবিত হয়েই ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষণা করে মানবাধিকার সনদ। অশান্তি দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ রচনায় এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সনদ সম্পর্কে ঐতিহাসিক P. K. Hitti বলেন, “আল মদিনার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই পরে বৃহত্তর ইসলামি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।”

মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় এসে তিনি পাঁচ শ্রেণির লোক দেখতে পান। এরা হচ্ছে মদিনার আদিম পৌত্তলিক সম্প্রদায়, ইহুদি সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, নবদীক্ষিত মুসলিম সম্প্রদায় এবং মক্কা থেকে আগত মুসলিম সম্প্রদায়। তিনি মদিনায় বসবাসরত এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। মদিনাবাসী ও মদিনার আশপাশে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন, শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (সা.) সকল গোত্রের সম্মতিতে একটি সনদ প্রণয়ন করেন। ইসলামের ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে এটি মদিনা সনদ (The charter of Madina) নামে পরিচিত। এ সনদ মহানবী (সা.) এর ধর্মীয় উদারতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।

মদিনা সনদ রচনার সময় (লিখিত সাল)

৬২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মদিনায় হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনার বিবদমান গোত্রগুলোর মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলেন। আর এ ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতেই ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে (সালে) মদিনা রাষ্ট্রের সকল জাতির সমন্বয়ে একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যাকে ইসলামের ইতিহাসে মদিনার সনদ বলা হয়

মদিনা সনদের শর্ত

বিখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের সিরাহ-ই-রসুলুল্লাহ্। গ্রন্থে মদিনা সনদের বিবরণ পাওয়া যায় তবে বর্তমানে এ গ্রন্থটির অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও ইবনে হিশামের সমালোচনামূলক গ্রন্থে মদিনা সনদের ৫৩টি ধারার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক মদিনা সনদের ৪৭টি শর্তের কথা বলেছেন। তবে ড. হামিদুল্লাহ বলেন, “মোট ৫২টি ধারাবিশিষ্ট এ সনদটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র।"

পরিশেষে বলা যায় যে, মদিনা সনদের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ঐক্য ও মিলন প্রতিষ্ঠিত হয় অপরবর্তীকালে ইসলামের সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের পথ সুগম করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ